নিজস্ব প্রতিবেদক: পৃথিবীটা কোন দিকে এগুচ্ছে। মানুষের মধ্যে মানবতা দিন দিন কমে আসছে। মানুষ ঘুড়ছে একটি মিথ্যা মরিচিকার পিছনে। দিন শেষে শূন্য হাতে ফিরতে হবে এটা তাদের মনে নেই। এজন্যই তারা এই পৃথিবীতে সামান্য সুখ ভোগের জন্য নানা অপকর্মের মধ্যে জড়িয়ে আছে। সকল জীবের জন্য ভাল মানের সুষম খাবার একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। কিন্তু সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের খাবারে ভেজাল দিয়ে খাবার তৈরী করছে আরেকজন মানুষ। যা খেয়ে মানুষ নানা জটিল রোগে ভূগছে এবং অনেকে মারা যাচ্ছে।
এখন চলছে শীতকাল। সৃষ্টিকর্তা মানুষের উপকারের জন্য নানাবিধ খাবার এই পৃথিবীতে দিয়েছেন। এর মধ্যে শীতের একটি নিয়ামত খেজুরের রস। যা খেজুর গাছের মাথার দিকে কাটলে ফোটায় ফোটায় রস পরে। এই নিয়ামতকে ভাঙ্গিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আসায় এক শ্রেণির অসত ব্যবসায়ী তৈরী করছে ভেজাল খেজুরের গুড়। যা হুবহু খেজুরের গুড়ের ন্যায় দেখতে। সাধারণভাবে উপায় নেই এটি চিনতে পারার। সেজন্য জনগণ অনাসায়ে খেজুরের গুড় মনে করে ক্রয় করে খাচ্ছেন। আর মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এমনি ভেজাল খেজুরের গুড় উদ্ধার করে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। সেইসাথে এই চক্রের সাতজনকে গ্রেফতারও করেছেন তারা। এনিয়ে সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, বিপিএম (বার) জানান আটককৃত পন্য নামেই গুড়। সম্পন্ন চিনি দিয়ে তৈরি নামমাত্র খেজুরের গুড়। তাতে নেই খেজুরের গুড়ের ঘ্রাণ। তবে কিছু কিছু গুড়ে থাকলেও তা ফ্লেভার মিশানো। এই গুড়ে প্রকৃত গুড়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। দেখলে গুড়ের মতো মনে হলেও এটা আদৌই গুড় নয়। রাজশাহী জেলার বাঘায় দীর্ঘদিন চলে আসছে এমন গুড় তৈরি ও বিক্রি কর্যক্রম। রাতের আধারে ক্ষতিকারক পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়। এসব গুড় সকাল হলেই ট্রাক বা অন্য যানবাহনে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্নস্থানে।
তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন থেকে এই চক্রকে হাতে ধরার জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন। গত রোববার এমন একটি চক্রের সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই সাতজনই ভেজালগুড় তৈরিতে অত্যন্ত পারদর্শী। এসময় তাদের থেকে ৫০ মণ ভেজাল খেজুরের গুড় উদ্ধার করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। সেইসাথে গ্রেফতারকৃতদের থেকে ভেজাল গুড় তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, এই গুড় মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। গ্রেফতারের পরে পুলিশ সদস্যরা আসামীদের তাদের নিজের খাওয়ার কথা বললে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কেউ এই গুড় খেয়ে দেখায় নি।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতদের গুড়ে ভেজাল বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসামীরা জানান, অত্র এলাকায় তৈরীকৃত শতভাগ ভাগ খেজুর ও আখের গুড়ে ভেজাল মিশ্রিত রয়েছে। এগুলো মানবদেহের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর।
সাংবাদিকরা বলেন শুধু বাঘাতে নয় রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে চারঘাট, পুঠিয়াতেও ব্যাপকহারে খেজুর গুড় তৈরী হয়। সেগুলো দেশের বিভিন্ন বাজারে চলে যায় এবং যেগুলো বাজারে এখন আছে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন সম্পর্ককে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, বাজারে ভেজাল গুড় থাকতে পারে। এগুলো বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের অন্য সংস্থাগুলো ভেজাল বিরোধী অভিযান চালাবে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। আমাদের জানালে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।
পুলিশ সুপার জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাঘার আড়ানী চকরপাড়া গ্রামে ভেজাল খেজুরের গুড় তৈরির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে ৫০ মণ ভেজাল খেজুরের গুড়সহ কারখানার মালিক ঐ এলাকার মৃত আবুল হোসেন ছেলে রকিব আলী (৪২), তার সহযোগী সুমন আলী (৪২), অনিক আলী পাইলট (৩০), মাসুদ রানা (৩০), বিপ্লব হোসেন সাজু (২৫), মামুন আলী (২৭) ও বাবুকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়। তাদের সবার বাড়ি আড়ানী চকরপাড়ায়।এরা দীর্ঘদিন থেকে এই পেশায় জড়িত। এর মধ্যে মুল আসামী কারখানার মালিক গুড় উৎপাদনকারী সমিতির সদস্য বলে জানান তিনি।
এসময় তাদের নিকট থেকে গুড় ভর্তি ৫৮টি ক্যারেট। প্রতিটি ক্যারেটের গুড়সহ ওজন ৩৫ কেজি করে সর্বমোট ২ হাজার ৩০ কেজি। মূল্য অনুমান ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬০০ টাকা।, ১০ বস্তা চিনি। ১৮ কেজি ফিটকিরি, ২৫ কেজি চুন, ৬০০ গ্রাম ডালডা, ১ কেজি হাইড্রোজসহ গুড় তৈরীর অন্যান্য সরঞ্জমাদি উদ্ধার করা হয়। এই উদ্ধারকৃত মালামালের মূল্য ৩ লাখ ৫ হাজার ৬৬৫ টাকা জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন হতে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান ৩ মাস যাবৎ ঐ কারখানায় চিনি, চুন, হাইড্রোজ, ফিটকারি, ডালডা ও বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে ভেজাল খেজুরের গুড় তৈরি করে আসছে। তারা এগুলো রাজধানী ঢাকা’সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করে থাকে। গুড় তৈরির ক্ষেত্রে তারা যে সকল রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে সেগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও জটিল রোগের সৃষ্টি করে। আটককৃত আসামীদের নামে মামলা হবে এবং এই সকল ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি। কারন এদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হলে অন্যরা আর এই ব্যবসা করতে অনেক ভয় পাবে বলে জানান পুলিশ সুপার। সেইসাথে ভেজাল গুড় বিএসটিআই হতে পরীক্ষা করিয়ে ধ্বংশ করা হবে। আর চিনি অন্যান্য সামগ্রী নিলামে বিক্রি করা হবে বলে জানান তিনি।
পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সময়ে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা) সনাতন চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ইফতে খায়ের আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) অলক বিশ্বাস, সহকারী পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা) রুবেল আহমেদ ও সহকারী পুলিশ সুপার (এসএএফ) নিয়াজ মেহেদী।