নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর সারদায় মতলেবুর রহমান (৩০) নামে এক যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হাতের রগ কেটে দিয়েছে বলে জানা গেছে। আর এই ঘটনার মূল হোতা চারঘাট আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বলে অভিযোগ উঠেছে। আহত মতলেবুর রহমান চারঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলে জানা গেছে।
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চারঘাট থানাধিন সারদা টিএনটি অফিসের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা পথরোধ করে তাকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হাতের রগ কেটে দেয় বলে মতলেবের ভাই মখলেস জানান। মতলেবুর রহমান গত ইউপি নির্বাচনে সারদা ইউনিয়ন থেকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মখলেস বলেন, তার নিজ গ্রাম সাদিপুরের আট থেকে দশজন শিক্ষার্থী সারদা কলেজের ভর্তি হয়েছে। এই সব শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যবসায়ী জুয়েলের বাক বিতন্ডা হয়। এর জের ধরে কয়েকদনি পূর্বে চারঘাট উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যার বিপ্লবের নেতৃত্বে চারঘাট এলাকায় এই বাকবিতন্ডা প্রতিবাদে মিছিল ও ককটেল ফাটোনো হয়। এনিয়ে জুয়েলের বাবা বসে একটি মিমাংশার কথা বললেও ভাইস চেয়ারম্যান মিমাংশা না করে এটা নিয়ে দন্দ বড় আকারের করে তোলে বলে জানান মখলেস।
তিনি আরো বলেন, এ বিষয় নিয়ে তার ভাই মতলেবুরকে দোষারোপ করতে থাকে তারা। মতলেবুর এই ঘটনাটি ভাল ভাবে জানার জন্য এবং এটা নিয়ে বসে মিমাংশা করার জন্য শুক্রবার দুপুরের দিকে মোটর সাইকেল যোগে জুয়েলের নিকট গেলে জুয়েল দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এ সময়ে তিনি মোটর সাইকেলেই বসে ছিলেন। এর এক পর্যায়ে কোন কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই বিপ্লবের নেতৃত্বে কয়েকজন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এসে মতলেবুরের গলা বরাবরে হাসুয়া চালায়। কিন্তু তিনি এটা প্রতিরোধ করতে গেলে হাসুয়ার কোপ হাতে লাগে এবং হাতের রগ কেটে যায় বলে জানান তিনি।
খবর পেয়ে তিনি এবং স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে যাওয়ার পূর্বেই চারঘাট থানা পুলিশ পথরোধ করে এবং মতালেবুরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে চারঘাট থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও কাজ না হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতার অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নং ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করা হয়। পরে তার হাতের অপারেশন করা হয়। কিন্তু এই অসুস্থ্য অবস্থায় মতলেবুরকে হাসপাতাল থেকে গভীর রাতে ছাড়পত্র ছাড়াই জোরপূর্বক চারঘাট থানা পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। এ সময়ে হাসপাতালে পুলিশ তার মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরন করেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শুধু তাই নয় রাত তিনটার দিকে পুলিশ তাদের নিজ বাড়িতে হানা দেন এবং অস্ত্র উদ্ধারের নাটক করে এবং পরিবারের নারী, পুরুষ ও শিশুদের সাথে অত্যন্ত খারাপ আচরন করে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এসকল তথ্য ভিডিও ফুটেজে রয়েছে বলে জানান তিনি। সেইসাথে তার ভাই নিদোর্শ বলে দাবী করেন মখলেস।
তিনি আরো বলেন, আহত মতলেবুুরের চিকিৎসার খবর নিতে গেলে রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও চারঘাট উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জীবনকেও চারঘাট থানা পুলিশ আটক করেন। তারা উভয়েই চারঘাট থানায় আছে বলে জানান গেছে। জহুরুল গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদন্দিতা করেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রান ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন বলেন, তিনি শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২নং ওয়ার্ডে একজন রোগি দেখতে যান। সে সময়ে এই ঘটনা জানতে পেরে তিনি ৩১ নং ওয়ার্ডে মতলেবুরকে দেখতে যান। সেখানে তিনি পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে তার হাতে ব্যান্ডেজ ছিলো এবং সেলাইন চলছিলো বলে জানান মিলন।
এ ব্যপারে জানতে চারঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম এর নিকট মুঠো ফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। তবে তিনি মন্ত্রীর ডিউটিতে থাকার জন্য বিস্তারিত জানাতে পারেন নি। সেইসাথে তিনি ডিউটি অফিসারের সাথে কথা বলার জন্য বলেন। তাঁর কথা মতে মামলা এবং ভূক্তভোগি পরিবারের পক্ষ থেকে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে জানাতে এ বিষয়ে দুপুরে থানার ডিউটি অফিসারকে ফোন করলে তিনি মামলা আনিত অভিযোগ সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে না দিয়ে পরে কথা বলার জন্য বলেন।
এবিষয়ে জানতে রাজশাহী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, মতলেবুরের বাড়িতে হামলা ও পরিবারের সদস্যদের সাথে কোন প্রকার অশালিন আচরণ ও টর্চার করা হয়নি। এই অভিযোগ সত্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মতলেবুরের নামে চৌদ্দটি মামলা রয়েছে। সেইসাথে তিনি সাতটি মামলার ওয়ান্টেকৃত আসামী। তিনি বলেন, ঘটনার দিন মতলেবুর আট থেকে দশ জন সঙ্গী নিয়ে চারঘাট বাজারের ব্যবসায়ী জুয়েলের নিকট দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেন। এসময়ে জুয়েল চিৎকার শুরু করলে সবাই পালানোর সময় মতলেবুরের টিনের সাথে লেগে হাত কেটে যায়।
এ অবস্থায় পালানোর সময় চারঘাট থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেন বলে জানান ইফতে খায়ের আলম। পরে চারঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিলে সেখানকার ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও রক্ত বন্ধ না হওয়ায় মতলেবুরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে তাকে আবারও চারঘাট থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার কথা এবং বাড়িতে অস্ত্র আছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
মতলেবুরের ভাষ্যমতে তাকে নিয়ে শনিবার রাত ৪টার দিকে তার বাড়িতে পুলিশ যান এবং বাড়িঘর তল্লাসী করে একটি পিস্তল, দুইটি তাজা গুলি ও একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করেন। এ বিষয়ে ধারা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি।