বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৪:৪১ অপরাহ্ন

বিএমডিএ’র উন্নত জাতের বীজে, ভাগ্য বদলেছে পদ্মার চরাঞ্চলের বাদাম চাষীদের

  • প্রকাশ সময় মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০২২
  • ৩৬০ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বছরে দুইবার চাষ হয় এমন ফসল হাতেগুনা। তবে পদ্মার চরে বছরে দুই বার চাষ হচ্ছে বাদামের। পতিত জমি, আর চাষাবাদে খরচ কম হওয়ায় প্রতিবছর বাড়ছে এই বাদামের চাষ। এবছর পদ্মার দুই চরে ৩০০ বিঘা জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে। বাদামের উন্নত বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এ তথ্য নিশ্চিত করে।

বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ বলছেন, বাদাম চাষে কৃষকদের আগ্রহ আছে। পদ্মাপাড়ের কৃষকরা চরে পুরানো জাতের বাদাম চাষ করতেন। তাতে তেমন ফলন হতো না। বাদাম চাষ লাভজনক করতে বিএমডিএ বারি-৯ জাতের বাদামের (চিনা বাদাম) বীজ কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করেছে। চাষাবাদে লাভজনক হওয়ায় গেল দুই বছরের ব্যবধানে বাদাম চাষের জমি বেড়েছে ১২০ বিঘা। যদিও বিএমডিএ গেল তিন বছর ধরে বাদামের বীজ সরবরহ করে আসছে কৃষকদের মাঝে।

বিএমডিএ’র সংশ্লিস্ট সূত্র বলছে, রাজশাহীর পদ্মার চরে বেশি কিছু পতিত জমি রয়েছে। সেই জমিগুলো বাদাম চাষের উপযোগী। বিএমডিএ চাষীদের বাদাম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উন্নত জাতের বীজ সরবরহ করেছে। ফলে একসময় পরে থাকা পতিত জমিতে এখন বাদাম চাষ হচ্ছে বছরে দুই বার। একটি রবি মৌসুম অর্থাৎ নভেম্বর থেকে এপ্রিল ও খরিপ-১ মে থেকে আগস্ট মাস। বাদাম চাষে একদিকে স্থানীয় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। আর এই অঞ্চলের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখছে পদ্মার চরের বাদাম।

বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী জিন্নুরাইন খান জানান, বর্তমানে পদ্মারচর পবার হরিপুরের মাঝারদিয়াড় ও চর মাঝারদিয়াড়ে বারি-৯ জাতের বাদাম চাষ হচ্ছে। বাদামের বীজ চাষীদের সরবরহ করা হয়। এই বীজ বর্তমান সময়ে অধিক ফলনশীল ও লাভজনক।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের দিকে ১৪৫ কেজি বাদামের বীজ পদ্মায় চাষের জন্য ১৩ জন কৃষককে দেওয়া হয়। সেই বছর ভালো ফলন হয়েছিল। এর পরের বছর ৩০০ কেজি বাদামের বীজ দেওয়া হয় আরো ১৫ জন কৃষককে। সর্বশেষ চলতি বছরে ২০০ কেজি বাদামের বীজ দেওয়া হয় ৯ জন কৃষককে। পদ্মার পতিত চরের জমিতে কৃষকরা এই বাদামের চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে।

তিনি আরো জানান, এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষের খচর হয় ৭ হাজার টাকা। তাতে বিঘায় ফলন হয় ৮ মন। আর একর প্রতি ফলন ৬০ মন। সবখরচ বাদ দিয়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা কৃষকের লাভ থাকে। বর্তমানে ৩৭ জন কৃষক বিএমডিএ এর দেওয়া বীজের বাদাম চাষ করছে।

এর আগে বাদাম চাষ নিয়ে পদ্মার চরে মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বিএমডিএর এইচ,ভিসিপি প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ এটিএম রফিকুল ইসলাম, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জগদীশ চন্দ্র বর্মন, হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জিল, বিএমডিএর পবার সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুল আলম ও উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাহাত পারভেজ।
বাদাম চাষী মতিউর রহমান জানান, ‘বাদাম চাষে খরচ কম। পদ্মার পতিত জমিতে ভালো চাষ হয়। বিএমডিএ এর দেওয়া বারি-৯ জাতের বাদামের ফলন ভালো, দানাও ভালো। এবছর তিনি ৭ বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করেছেন। আগে তারা যে জাতের বাদাম চাষ করতেন তাতে ফলন কম হতো। কিন্তু এই বাদামে ফলন ভালো হয় বলে জানান তিনি।

রাজশাহী কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) তৌফিকুর রহমান জানান, রাজশাহী জেলায় এবছর ৩৭৮ হেক্টর জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বাঘায় সবচেয়ে বেশি। এই উপজেলায় ৩২৭ হেক্টর জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে। এছাড়া পবায় ৩০ হেক্টর, গোদাগাড়ীতে ৭ ও বাগমারায় ১০ হেক্টর জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে। এক কথার উত্তরে তিনি বলেন- গত বছরের চেয়ে এবছর ৩৪ হেক্টর জমিতে কম বাদামের চাষ হয়েছে। গেল বছর প্রণোদনা থাকায় জেলায় বাদামের চাষ হয়েছিল। সেই বছর ৪০৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। তবে এবছর প্রণোদনা না থাকলেও তুলনামূলক বেশি জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বিএমডিএর চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান জানান, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা চান কৃষিতে যেন কোন অঞ্চল পিছিয়ে না থাকে সেজন্যই প্রতিনিয়ত তিনি কৃষিক্ষেত্রে কিভাবে উন্নয়ন করবে সে বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান চরাঞ্চলের মানুষ আগে যেখানে কোন ফসল ফলাতে পারতোনা, সেখানে বিএমডিএ’র সেচের মাধ্যমে পদ্মার চরে বিভিন্ন চাষবাদ করা সম্ভব হচ্ছে।

আর এসব কৃষকদের মাঝে বিএমডিএ উন্নত জাতের বাদামের বীজ সরবারহ করায় এখন বাদাম চাষে বেশ লাভবান এবং দিন দিন এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে চরাঞ্চলে মানুষের জীবন-জীবিকার মানও উন্নয়ন হচ্ছে বলে জানান চেয়ারম্যান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin