নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজারে সাধারণত দেখা মেলে সবুজ বা গাঢ়ো সবুজ বর্ণের তরমুজ। কিন্তু ব্যতিক্রমী সোনালি বর্ণের বিদেশী গোল্ডেন ক্রাউন, বা ‘মাল্টা তরমুজ’ ও আম্রতা জাতের এই তরমুজের চাষ হচ্ছে গোদাগাড়ীর লাল মাটিতে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী বর্তমানে দেশের একটি শস্য ভান্ডারে পরিণত হয়েছে। সেই শস্য ভান্ডারে চাষ হচ্ছে এই ধরনের ফল। গোদাগাড়ীতে ধান,পাট,ভূট্টা ও অন্যান্য ফসল এবং শাক-সবজীর পাশাপাশি উৎপাদন হচ্ছে হলুদ ও কালো তরমুজের।
স্বল্প পরিমাণ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ ও আম্রতা জাতের তরমুজ চাষ শুরু করেছেন গোদাগাড়ীর রিশিকুল ইউনিয়নের ইন্দ্রজিত রামদাস নামে একজন কৃষক। মাত্র তিন কাঠা জমিতে এই ধরনের তরমুজের চাষ করেছেন তিনি। এই ফলের চাষ সম্পর্কে ইন্দ্রজিত বলেন, কাঁকনহাটে অবস্থিত বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় তিনি এই তরমুজের চাষ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে তার ক্ষেতে তরমুজের সমারোহ দেখা দিয়েছে। একদিকে হলুদ, অন্য দিকে গাঢ়ো। এই তরমুজ চাষ করে তিনি লাভবান হবে বলে আশাব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, তরমুজের চারা রোপন থেকে বুধবার পর্যন্ত এই জমিতে মাত্র পনের হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন বর্তমানে তাঁর তরমুজ ক্ষেতে ২৫০টি তরমুজ রয়েছে। গড়ে প্রতিটি তরমুজ একশ টাকা করে বিক্রি হলেও প্রথম চালানে তিনি পঁচিশ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, এরপর থেকে খরচ নাই বললেই চলে। শুধুমাত্র পরিচর্যা আর সামান্য কিছু জৈব ও রাসায়নিক সার দিলেই আরো দুই থেকে তিন বার তরমুজ উত্তোলন করা যাবে বলে জানান তিনি। এতে তিনি এই মৌসুমে প্রায় লক্ষাধীক টাকা আয় করবেন বলে জানান ইন্দ্রজিত। সেইসাথে আগামীতে তিনি আরো বেশী জমিতে এই ধরনের তরমুজের চাষ করবেন। এই চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গোল্ডেন ক্রাউন বা মাল্টা তরমুজ অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি সুস্বাদু ফল। সাধারণত উঁচু জমি এবং দো-আঁশ মাটি এই তরমুজ চাষের জন্য উপযুক্ত। সাধারণত তরমুজ মাটিতে হলেও এটি মাচায় বড় হয়। বীজ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে ফুল আসে এবং ৫৫-৬০ দিনের মাথায় ফল কাটা শুরু হয়। এ তরমুজের আদি নিবাস তাইওয়ান। নতুন জাতের তরমুজটি উপজেলায় গত কয়েক বছর থেকে চাষ শুরু হলেও বাজারে ভাল দামের পাশাপাশি চাহিদাও রয়েছে বেশ।
গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁনকহাট ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, মাঠ পর্যায়ে সকল ধরনের চাষের জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, এই সকল ফসল চাষে বিষমুক্ত ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও তরমুজে থ্রিপস পোকা, মাকড়. মাছি ও গোড়া পঁচা রোগ হয়। এই সকল বালাই দমনে নিমের তেল, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ও ক্ষেত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেইসাথে বাজারে অনেক ধরনের কিটনাশক পাওয়া যায় সে গুলো কৃষি অফিসারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়াও জমিতে কোন ভাবেই পানি জমতে দেয়া যাবেনা বলে জানান এই কৃষি অফিসার।
এদিকে গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের কাঁকনহাট শাখার লাইফ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী আবু জাফর বলেন, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেআইসিএফ) এর সহযোগিতায় এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই ধরনের তরমুজের চাষ করার জন্য প্রকল্প এলাকার চাষীদের পরামর্শ প্রদান করেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী শুধু ইন্দ্রজিত নয়, নারায়নপুরের গোলাম রাব্বানী, ঘিয়াপুকুরের মাহাবুবুর রহমান ও মান্ডইলের জগন্নাথ দাস একই ধরনের ও জাতের তরমুজ চাষ করছেন। তাদের ক্ষেত্রেও তরমুজে ভরে আছে। আর মাত্র এক সম্পাহ পড়েই বাজারজাত করা যাবে বলে জানান জাফর।