বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন

করলা চাষে উৎসাহীত হচ্ছে বরেন্দ্রর চাষীরা

  • প্রকাশ সময় শুক্রবার, ১৩ মে, ২০২২
  • ৫০২ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: করলা মানব দেহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি। শস্যভান্ডার খ্যাত রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বরেন্দ্র অঞ্চলে অন্যান্য ফসলের সাথে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। এই সকল সবজির মধ্যে মানব দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ন সবজি হচ্ছে করলা। করলা সব সব ভাবেই খাওয়া যায়। করলা ডায়াবেটিস রোগিদের জন্য অত্যন্য জরুরী একটি সবজি। গোদাগাপড়ী উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে এবার ৪০ হেক্টর জমিতে করলা চাষ হচ্ছে।
করলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সবজি। স্বাদে তিক্ত হলেও বাংলাদেশের সকলের নিকট এটি প্রিয় সবজি হিসেবে পরিচিত। ১০০ গ্রাম খাবার যোগ্য করলায় ১.৫-২.০ ভাগ আমিষ, ২০-২৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১.৮-২.০ মিলিগ্রাম লৌহ এবং ৮৮.৯৬ মিলিগ্রাম খাদ্যপ্রাণ সি আছে। উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় করলা ভাল জন্মে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে পরাগায়ন বিঘ্নিত হতে পারে। সব রকম মাটিতেই করলার চাষ করা যেতে পারে। জৈব সার সমৃদ্ধ দো-আঁশ বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভাল জন্মে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কাঁকনহাট ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, করলা বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে। এর মধ্যে বারি করলা-১ ও গজ করলা অন্যতম। এসব করলার মোট জীবনকাল প্রায় চার থেকে সারে চার মাস। তবে জাত ও আবহাওয়াভেদে কোন কোন সময় কম বেশী হতে পারে। ফেব্র্বয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে যে কোন সময় করলার বীজ বোনা যেতে পারে। কেউ কেউ জানুয়ারী মাসেও বীজ বুনে থাকেন। কিন্তু এ সময় তাপমাত্রা কম থাকায় গাছ দ্রুত বাড়তে পারে না। ফলে আগাম ফসল উৎপাদনে তেমন সুবিধা হয় না। করলা ও উচ্ছের জন্য হেক্টর প্রতি যথাক্রমে ৬ থেকে সাড়ে ৭ কেজি ও ৩ থেকে সাড়ে ৩ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

তিনি বলেন, উচ্ছে ও করলার বীজ সরাসরি মাদায় (৪০বাই, ৪০বাই, ৪০ সেমি) বোনা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রতি মাদায় কমপক্ষে ২টি বীজ বপন অথবা পলিব্যাগে উৎপাদিত ১৫-২০ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হবে। উচ্ছের ক্ষেত্রে সারিতে ১.০ মিটার এবং করলার জন্য ১.৫ মিটার দূরত্বের মাদা তৈরী করতে হবে। মাদা বীজ বুনতে বা চারা রোপণ করতে হলে অন্তত: ১০ দিন আগে মাদা নির্ধারিত সার প্রয়োগ করে তৈরী করে নিতে হবে।

চারা গজানোর ৪৫-৪৫ দিন পর উচ্ছের গাছ ফল দিতে থাকে। করলার বেলায় প্রায় ২ মাস লেগে যায়। স্ত্রীফুলের পরাগায়নের ১৫-২০ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ফল আহরণ একবার শুরু হলে তা দুমাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ফলন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে উচ্ছে ও করলার হেক্টর প্রতি ফলন যথাক্রমে ৭-১০ টন, যা শতাংশে ৩০-৪০ কেজি) এবং উচ্ছে ২০-২৫ টন যা শতাংশে (৮০-১০০ কেজি) পাওয়া যায়।

করলার উপকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, করলা (করল্লা, উচ্ছা, উচ্ছে) এক প্রকার ফল জাতীয় সবজি। এলার্জি প্রতিরোধে এর রস দারুণ উপকারি। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি উত্তম। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে করলার রস খেলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। করলায় যথেষ্ট পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন ছাড়াও এতে রয়েছে বহু গুণ।

করলার আরো পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা ব্রকলি থেকেও দ্বিগুণ পরিমানে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে এতে। দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে ও চোখের সমস্যা সমাধানে বিটা ক্যারোটিন উপকারী। করলায় প্রচুর পরিমানে আয়রণ রয়েছে। আয়রণ হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে। পালংশাকের দ্বিগুণ ক্যালসিয়াম ও কলার দ্বিগুণ পরিমান পটাশিয়াম করলায় রয়েছে। দাঁত ও হাড় ভাল রাখার জন্য ক্যালসিয়াম জরুরি। ব্লাড প্রেশার মেনটেন করার জন্য ও হার্ট ভাল রাখার জন্য পটাশিয়াম প্রয়োজন।

এছাড়াও করলায় যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। ভিটামিন সি ত্বক ও চুলের জন্য একান্ত জরুরি। ভিটামিন সি আমাদের দেহে প্রোটিন ও আয়রন যোগায় এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তোলে। ফাইবার সমৃদ্ধ করলা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমায়। করলায় রয়েছে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক এসিড, জিঙ্ক, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম।

বিভিন্ন তথ্যমতে করলা অসুখ নিরাময়ে সাহায্য করে। ডায়বেটিসের রোগির জন্য করলা অত্যন্ত উপকারী। করলায় রয়েছে পলিপেপটাইড পি, যা ব্লাড ও ইউরিন সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে করলার রস ও করলা সিদ্ধ খেতে খাওয়া যেতে পারে। নানা রকমের ব্লাড ডিজঅর্ডার যেমন স্ক্যাবিজ, রিং ওয়র্ম এর সমস্যায় করলা উপকারি। ব্লাড পিউরিফিকেশনে সাহায্য করে। স্কিন ডিজিজ ও ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।

করলা পাতার রস খুবই উপকারী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে, নানা ধরনের ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। এনার্জি ও স্টেমিনা বাড়িয়ে তুলতেও করলা পাতার রস সাহায্য করে। অতিরিক্ত এলকোহল খাওয়ার অভ্যাস থেকে লিভার ড্যামেজড হলে, সে সমস্যায় করলা পাতার রস দারুন কাজে দেয়। ব্লাড ডিজঅর্ডার সমস্যায় লেবুর রস ও করলা পাতার রস মিশিয়ে খেলে অত্যন্ত উপকার হয়। করলা পাতার রসে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, ফেরেনজাইটিসের মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে সোরিয়াসিসের সমস্যা, ফাংগাল ইনফেকশন প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

করলায় নানা ধরনের রোগ বালাই হয়ে থাকে- যেমন করলার কাঁঠালে পোকা, করলার লিফ কার্ল রোগ, ভাইরাস জনিত মোজাইক রোগ, জাব পোকা ও মাছি পোকা। এ সব পোকার আক্রমন হলে স্থানীয় কৃষি অফিসারের সাথে পরামর্শক্রমে কিটনাশক কিংবা ওষুধ স্প্রে করতে হবে।

গোদাগাড়ীর মান্ডইল করলা চাষী মঞ্জুর রহমান বাবু বলেন, তিনি মান্ডইল রামদাসপাড়া মাঠে ৬কাঠা জমিতে করলার চাষ করেছেন। চারা রোপনের পর ৪০দিনের মধ্যে তিনি তার জমি থেকে করলা উত্তোলন শুরু করেছেন। তার এই ৬কাঠা জমিতে এ পর্যন্ত পনের হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম চালানে তের হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। এর পরে সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন তিনি করলা উত্তোলন করেন। সপ্তাহে তিনি ৫ থেকে ৬হাজার টাকা বিক্রি করছেন। এভাবে ৫ থেকে ৬মাস পর্যন্ত করলা উত্তোলন করা যায়। এভাবে চলতে থাকলে তিনি ভাল লাভবান হবেন বলে জানান কৃষক বাবু। এই মৌসুমে ফলন ভাল হলে আগামী বছরে তিনি আরো বেশি করে করলার চাষ করবেন বলে জানান তিনি।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin