নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ী ইউনিয়নে জমি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই সহদ্বর ভাইসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটে। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ১০ জন। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
সোমবার (১০ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার পাকড়ি ইউনিয়নের মুসরাপাড়া ইয়াজপুর গ্রামে এই সংঘর্ষ ঘটে। খবর পেয়ে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে বিষয়টি ঐ গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে এখনও টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
সংঘর্ষে নিহতরা হলেন- দুই সহোদ্বর রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বড়গাছী কানুপাড়া গ্রামের নাইমুল (৮০) ও মেহের আলী (৭০) এবং রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার ভাটাপাড়া এলাকার সোহেল রানা (৪৫)। আহতদের মধ্যে ৬ জনকে রামেক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- ইউনুস আলী (২২), আমু (২২), রায়হান (৩৫), মনিরুল (৪৫), সোলেমান (৫০) ও রজব (৩১)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনদের ভাষ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিরোধপূর্ণ জমিতে ধান রোপন করতে যান স্থানীয় সেলিম রেজা গ্রুপের লোকজন। এতে বাধা দেয় প্রতিপক্ষ আশিক চাঁদের গ্রুপ। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে সেলিম রেজা গ্রুপের আহত হয় অন্তত ১০ জন।
সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক আছের আলী বলেন, সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে কেউ মারা যায়নি। হতাহতদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে যাওয়ার পর এক জনের মৃত্যু হয় বলে জানান তিনি।
তবে রোববার দুপুর ১টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, মূলত সকাল সাড়ে ৯টার দিক থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এই সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৮-১০ জন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তিন জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আর পথেই একজন মারা যান।
ময়নাতদন্তের পর মর্গ থেকে মরদেহ তিনটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঐ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ জড়িতদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করছেন। এই ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান গোদাগাড়ী থানার এই পুলিশ কর্মকর্তা।
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) সনাতন চক্রবর্তী বলেন, জমি নিয়ে বিরোধ ছিল আগে থেকেই। সোমবার সকালে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। আর মূলত এটি সেই অর্থে সংঘর্ষও নয়। যাদেরকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, তাদের বয়স দেখেন- তারা বয়োবৃদ্ধ! একজনের বয়স ৭০ আরেক জনের ৮০ বছর। মূলত এটা হামলা হয়েছে। প্রতিপক্ষের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে এই হামলা চালিয়েছে।
আর অপরপক্ষ পুরোপুরি অপ্রস্তুত ছিল। তাই তারাই বেশি হতাহত হয়েছেন। ঘটনার পর পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিরাও ধরা পড়বে। তারা এই ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে দেখছেন।
এদিকে সংঘর্ষের পর হতাহতদের এক এক করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নিয়ে আসা হলে তাদের পরিবার, স্বজন ও গ্রামের প্রতিবেশীর আসেন। এ সময় নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। সকল পরিবাওে চলছে শোকের মাতম। এছাড়াও মেডিকেলের পরিবেশও ভারী হয়ে ওঠে।