জন হেম্ব্রম, সাংস্কৃতিক কর্মী: আজ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। নিজে একজন আদিবাসী হিসেবে এই দিনটি গৌরবের। সারা পৃথিবীর মানুষ ১৯৯৪ সাল থেকে আদিবাসী দিবস পালন করে আসছে। আদিবাসীদের অধিকার, মানবাধিকার ও স্বাধীনতাসংক্রান্ত বিষয়সমূহ নিয়ে ১৯৮২ সালের ৯ আগস্ট জাতিসংঘের আদিবাসী জনগোষ্ঠীবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জাতিসংঘের সংস্থাকে আদিবাসীদের অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রের খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। আদিবাসী জাতিসত্বার শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কাজ করাই এর প্রধান লক্ষ্য ছিল। যা মূলত ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ^ আদিবাসী দিবস পালনে ৪৯/২১৪ বিধিমালায় স্বীকৃতি পায়।
যা বিশে^র ৯০ টির অধিক দেশে পালিত হয়ে আসলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন।এর কারণ বাংলাদেশে প্রায় ৫০ টির অধিক আদিবাসী জাতিসত্বার বসবাস থাকলেও, রাষ্ট্রীয়ভাবে সাংবিধানিক স্বীকৃত নয়। এর মধ্যে প্রায় ৩৩ টির অধিক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বসবাস বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। এদের মধ্যে সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুন্ডা, কোল, পাহাড়ি/মালপাহাড়ী,কড়া প্রভৃতি।সংখ্যাগত দিক দিয়ে সাঁওতাল হল বৃহত্তর জাতিগোষ্ঠী।২০২২ সালের আদমশুমারীর তথ্য মতে বর্তমানে বৃহত্তর রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিং বিভাগে বসবাসরত: আদিবাসীদের সংখ্যা তিন লক্ষ সাতানব্বই হাজার দুইশত একুশ জন। আদমশুমারীর এই তথ্য নিয়ে অনেক মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে সংখ্যাগত ভাবে এই অঞ্চলের বৃহত্তর জাতি হল সাঁওতাল, এর সংখ্যা এক লক্ষ ঊনত্রিশ হাজার উনপঞ্চাশ জন। যদিও বিভিন্ন বেসরকারী তথ্য মতে এর সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ্যের অধিক। এই চিত্র তুলে ধরার অন্যতম কারন হল আমি আশাবাদী আগামী আদমশুমারীতে সঠিক তথ্য তুলে ধরার সকল ব্যবস্থা গ্রহন করবে রাষ্ট্র।
প্রত্যেক বছরের ন্যায় জাতিসংঘের নির্ধারিত ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস এর প্রতিপাদ্য বিষয় হল “Indigenous Youth as Agents of Change for Self-determination”অর্থাৎ“আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আদিবাসী তরুণরাই মূল শক্তি”। ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস এর প্রতিপাদ্য বিষয় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি বিশ^াস করি একটি জাতির ন্যায্যতার প্রশ্নে তরুণরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে তরুনদেও জীবন দক্ষতায় দক্ষ করে তুলতে হবে। তাদের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। শোষন, নির্যাতন এবং অধিকার আদায়ের আন্দেলনে তরুনদের এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহ প্রদান করতে হবে।আদিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ভূমির অধিকার নিশ্চিতের আন্দোলনে আদিবাসী তরুণরাই হবে প্রধান চালিকা শক্তি।
শুরুতে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার কি? এটা জানা জরুরী। কারণ আমার মতো অনেক যুবকের কাছে এই শব্দটি সহজে বোধগম্য নয়! ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নিয়ে কথা বলেন। বাংলায় দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুজাতিসংঘের সদস্য পৃথিবীর সকল দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারে বাংলা ভাষার কথা, জানতে পারে বাংলা ভাষাভাষী বাঙালি জাতির জন্য রয়েছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। তার নাম বাংলাদেশ।এ বাংলাদেশ স্বাধীন করতে ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে। জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে,তিনি বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছিলেন বাংলা ভাষাকে।
মানব ইতিহাসে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতি এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। জাতীয়তাবোধের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত জনসাধারণের প্রাণের আকুতি হচ্ছে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। এই অধিকার কায়েম করে একটি জনগোষ্ঠীনিজস্ব শাসন ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হলে তা জাতীয়-রাষ্ট্রে রূপলাভ করে। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতির প্রবক্তা জন স্টুয়ার্ট মিল বলেন, ‘‘যেখানেই জাতীয়তার ভাব বেশ প্রবল আকার ধারণ করেছে, সেখানেই এক জন সম্প্রদায়ের সকল লোককে এক শাসনে ঐক্যবদ্ধ করা এবং তাদের জন্য এক স¦তন্ত্র সরকারের ব্যবস্থা করার যুক্তি রয়েছে। অর্থাৎ,আত্মনির্ধারণের নীতির বাস্তবায়নে বিভিন্ন জাতির স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্য রক্ষা, সংস্কৃতির বিকাশ, গণতন্ত্র এবং জাতির ন্যায্যতা ও সাম্যতা প্রতিষ্ঠা করাই আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতি।
যেখানে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার বন্ধন দৃঢ় হয়। এই সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে গোটা বিশ^কে পরিবর্তন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নীতি বাস্তবায়ন করা খুবই সম্ভব। সহযোগিতা ও সহমর্মিতা সম্পর্কে আলোচনা করার আগে সহানুভূতি ও সমানুভূতি সম্পর্কে জানা জরুরী। সহানুভূতি বা sympathy হল – অন্যের কষ্ট দেখে করুণা প্রকাশ করা আর সমানুভূতি বা empathy হল – অন্যের কষ্টকে অনুভব করে করুণা প্রকাশ করা।দুঃখী, বিপদগ্রস্থ, রোগাক্রান্ত কিংবা বিপন্ন-বিষণ্ন মানুষের বেদনা, মনোকষ্ট উপলব্ধি করে তাদের সাথে একাত্ম ও সমব্যথী হওয়াই সহমর্মিতা। সহমর্মিতা প্রকাশের মাধ্যমে সেইদুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে ভূমিক রাখাই হল সহযোগীতা। এই বিষয়ে ২৮ জুলাই ২০২৩ ইং তারিখে বনিক বার্তার সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত তরুন লেখকনিজাম আশ শামস-“প্রতিযোগিতা নয়, প্রয়োজন সহযোগিতা ও সহমর্মিতা” শীর্ষক লেখনীর মাধ্যমে সহযোগীতা এবং সহমর্মীতার বিষয় স্পষ্ট করেন।
আনেক গুনিজনের মতে বর্তমানে আদিবাসী সমাজের প্রধান সমস্যা হল আত্মপরিচয় সংকট। আমি এই কথার সাথে পুরোপুরি সমর্থন বা বিরোধিতা করছি না,বরং একজন আদিবাসী যুবক এবং অত্যন্ত আশাবাদী মানুষ হিসেবে, আদিবাসী তরুণদের ইতিবাচক বিষয়গুলি তুলে ধরার মাধ্যমে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসরতঃ আদিবাসী তরুনদের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিজের মত করে তুলে চেষ্টা করবো। আমি ইতিপূর্বেও বলেছি, আজ থেকে ১০ বছর আগে আদিবাসী ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশুনার পরও, তাদেও আত্নপরিচয় প্রদানে সংকোচ বোধ করতো। আমি দেখেছি তারা নিজ ভাষায় কথা বলতে লজ্জ¦াবোধ করতো। “ডবঃ জোহার” করতে (সাঁওতাল ঐতিহ্যবাহী সম্মান প্রদর্শনের রীতি) করতে দ্বিধা করতো। যেখানে আত্মপরিচয় প্রকাশে দ্বিধা-দ্বন্দ ছিলো সেখানে নিজেদের ন্যায্যতার দাবি করাটা হাস্যকর। কিন্তু বর্তমানে এর পরিবর্তন স্পষ্ট। আদিবাসী ছেলেমেয়েরা তারা নিজ ভাষায় কথা বলতে,“ডবঃ জোহার” করতে অর্থাৎ আত্মপরিচয় প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করে না। কিছু ক্ষেত্রে পরিবারিক ও সামাজিক সীমাবদ্ধ্যতার জায়গা থেকে এখনো হইতো আদিবাসী যুবসমাজ সম্পূর্ণরুপে তাদের ন্যায্যতা এবং জাতীয়তাবোধ সম্পূর্ণরুপে উপলব্ধি করতে পারছে না। কিন্তু আমি আশাবাদী বর্তমানের তরুণরাই এই এই সমস্যা সমাধানে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে। আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তরুণ সমাজের অংশগ্রহন সামনের সারিতে থাকে,বর্তমানে এই বিষয়টি লক্ষনীয় ।
আমি এক্ষত্রে আদিবাসী কোটা আন্দোলন নিয়ে কথা আলোচনা করতে চাই। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর রাষ্ট্র সকল কোটা (১ম ও ২য় শ্রেনীতে )ব্যবস্থা উঠিয়ে নেওয়া হল। তখন দেখেছি রাজপথে আদিবাসী শিক্ষর্থীদেও অবস্থান। এখনো এই আন্দোলন সফল হইনি, কিন্তু এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষন করতে চাই। সেই সময় আমি রাজশাহী কলেজে পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তর বিভাগের এর ছাত্র ছিলাম। আমি দেখেছি আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অধিকার আন্দোলনের জন্য জাগ্রত হতে। সেই সময় রাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া জানায় “আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ পরিষদ” নামে একটি সংগঠন। যারা রাজধানীতে সকল আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহনের মাধ্যমে আন্দোলন পরিচালনা করলেও বৃহত্তর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কেন্দ্র রাজশাহী ও রংপুরে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা রাজপথে তখনও অবস্থান নেয় নি।
রাজশাহী কলেজের মাঠ থেকে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ সহ রাজশাহী শহরে অবস্থানরত সকল আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনের “আদিবাসী কোটা রক্ষা কমিটি” নামে সংগঠনের ব্যানারে রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়। ধীওে ধীরে এই আন্দোলন দিনাজপুর এবং রংপুরেও ছড়িয়ে পড়ে, পরে যা বৃহত্তর সংগ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিলো সেই সময়। আমি দেখেছি ন্যায্যতার জন্য,অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আদিবাসী তরুনদের সতস্ফুর্ত অংশগ্রহন। এই আন্দোলন এখনো চলমান রয়েছে। কোভিড- ১৯ এর কারনে এই আন্দোলন কিছুটা বাধাগ্রস্থ হলেও আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন আদিবাসী গণসংগঠন রাষ্ট্রের কাছেএই দাবি জানাচ্ছে।
এটা সম্পূর্ণ যৌক্তিক দাবী, কারণ-কোটা সংস্কার আন্দোলনে কেউ একবারের জন্য বলেনি কোটা উঠিয়ে দেওয়ার কথা,বলা হয়েছিলো সংষ্কারের কথা। কারণ, সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, আদিবাসী, নারী আর শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ করাটা জরুরি। তা না হলে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন। সুযোগ না পেলে অনগ্রসররা আরও পিছিয়ে যাবে। বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের ২৯ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে,নাগরিকদের যে কোনও অনগ্রসর অংশ যেন সরকারি চাকরিতে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন, সেই উদ্দেশে তাদের কল্যাণে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হবে। মন্ত্রীপরিষদ সচিব সফিউল আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি সরকারি কমিটি সিভিল সার্ভিসে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর চাকুরীর জন্য কোটা ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করে এবং মিডিয়ায় একটি হাস্যকর যুক্তি তুলে ধরা হয় যে, আদিবাসীরা নাকি অনেক এগিয়ে গেছে। তাই তাদের জন্য বর্তমানে কোটা ব্যবস্থার কোন প্রয়োজনীয়তাই নেই।
অথচ২০১৩ সালের পরিপত্রে বলা হয়- শান্তিচুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের জন্য সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। যদি যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে প্রেষণে ও নির্দিষ্ট মেয়াদে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে। তারমানে এ বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে সঠিক মাঠ পর্যায়ে কোন প্রকার জরিপ নেওয়া হয়নি। যদি জরিপ করা হতো তাহলে দেখা যেত যে, বিগত বছর গুলোতে যে ৫% কোটা রাখা হয়েছিল তা কিন্তু দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসরতঃ আদিবাসীরা ভালো মত ব্যাবহারই করতে পারেনি। আর তার কারনটা হলো তখনও পর্যন্ত তেমন ভাবে কেউ শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে থাকতে পারেনি। যেখানে শিক্ষায় সুশিক্ষিত হওয়ায় তাদের পক্ষে অন্তরায় ছিল সেখানে ৫% কোটা তাদের জন্য রেখে কতটুকু লাভ হয়েছিল ? তাহলে এই সুবিধাটা পেয়েছিল কারা? হয়তো বা বলতে পারি এই কোটার সুবিধা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা বেশী পেয়েছে। কিন্তু তার পরও যে এটি খুব একটা সরকারী চাকুরিতে প্রভাব ফেলেছিল তা কিন্তু নয়।
কেননা প্রতি বছর যে পরিমান নিয়োগ হয় আদিবাসীরা তাদের কোটার ১%ও ভালোমতো পূরন করতে পারেনি। যেখানে সমতলের আদিবাসীরা নিজ ভুমিতেই পরবাসী সেখানে সমতলের আদিবাসীদের জীবন মান না দেখে, কেমন করে কোটা বাতিল করার মতো এতবড় সিদ্ধাš Íরাষ্ট্র নিতে পারে? বিশেষজ্ঞদের মতে শুধু মাত্র রাজনৈতিক চাপ সামলানোর জন্যই কিন্তু গথ বাধা একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে আন্দোলন দমানোর জন্য পুরো কোটা ব্যবস্থায় বাতিল করা হয়। আমি এই যৌতিক আন্দোলনের সফলতা প্রত্যাশা করি। কিন্তু আর কত আদিবাসীদের লড়াই সংগ্রামের পর, রাষ্ট্র আদিবাসীদের ন্যায়তা ফিরিয়ে দিবে। আদিবাসীর তো যুগ যুগ থেকে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে আসছে। সেই ১৭৮৪ সাল থেকে ভগলপুওে তরুণ তীলকা মাঝি থেকে বিরসা মুন্ডা সহ বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনে তরুনদের সামনে থেকে অংশগ্রহন। সকল আন্দোলনই ছিলো আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, ন্যায্যতার আন্দোলন। আমি বিশ^াস করি বর্তমানের তরুণরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়বে।
নিজের অনুধাবন থেকে কথাগুলো বলছি, একটি জাতি বিকাশ ঘটাতে পারে কেবল মাত্র শিক্ষা। বর্তমানে দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে বসবাসরতঃআদিবাসী ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, বিভিন্ন কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছে। এক সময় হাতে-গোনা কয়েকজন কে পাওয়া যেত,যারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এখন তা হাজারের গন্ডি পেরিয়ে গেছে।প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহনের মাধ্যমে আমাদের আদিবাসী সমাজ অর্থনৈতিক দূরাবস্থা থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসবে বলে আমি বিশ^াস করি। অর্থনৈতিক মুক্তি আমাদের আদিবাসী সমাজের বিপ্লব ঘটাবে। সেই সাথে শিক্ষিত সমাজ ব্যবস্থা আত্ননিয়ন্ত্রনাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষে কাজকরবে। যেখানে আদিবাসীদের থাকবে সাম্যতা এবং ন্যয্যতার সমাজ ব্যবস্থা এবং সকল দ্বায়িত্ব নিবে রাষ্ট্র।
একটি সুপরিকল্পীত এবং মর্যাদাপূর্ণ জাতিকে তৈরি করতে হলে এর সূচনা করতে হবে কৈশোর বয়স থেকেই। আজকের তরুণরাই আগামীর বাবা-মা। আমি বিশ^াস করি আগামীর বাবা-মা তাদের সন্তানদের জাতিয়তা,সাম্যতা এবং ন্যয্যতার বিষয়ে শিক্ষা দিবে।ছেলে -মেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য পরিবার থেকে উৎসাহ প্রদান করা হবে। আমি মনে করি প্রত্যেক আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের ছাত্রাবস্থায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকা উচিৎ। হোক সেটা রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন।এর ফলে জাতিয়তাবোধ এবং ন্যায্যতার বিষয়াবলী নিয়ে আরো বেশি সচেতন হবে।
আমি আশাবাদী এ বছর আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস এর আয়োজক বৃন্দের বহত্তর অংশ হল আদিবাসী তরুণ সমাজ। আমি আশাবাদী কারণ, হুল মাহা আয়োজন, আদিবাসীদের লোক সঙ্গীত উৎসব আয়োজন, জাতীয় সান্তাল সঙ্গীত উৎসবসহ বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের আয়োজক আদিবাসী তরুন সমাজ। আমি আশাবাদী কারণ, সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পৃথক ভূমি কমিশন, আদিবাসী কোটা পূণবর্হাল সহ ন্যায্যতার আন্দোলনে আদিবাসী তরুণ সমাজের অংশগ্রহন দেখে। তরুণ সমাজের এই জাগরণ শুধু শহরকেন্দ্রিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক বা ছাত্র সংগঠণ কেন্দ্রিক নয়, গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি বিশ^াস করি, এই সকল আদিবাসী তরুণেরাই সাম্যতা ও ন্যায্যতার সমাজব্যবস্থা গঠনে রাষ্ট্রকে বাধ্য করবে এবং সেটিই হবে সোনার বাংলাদেশ।