নিজস্ব প্রতিবেদক; বাংলাদেশে উত্তরের একেবারে সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর একটি প্রত্যন্ত গ্রাম জলাহার। এই প্রত্যন্ত কাদামাখা মেঠোপথ দিয়ে যাওয়া জলাহার গ্রামেই ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে শ্যাম টুডু ও রাজোবালা মুরমু’র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন প্রভাত টুডু। সাত ভাই-বোনের মধ্যে প্রভাত টুডু সবার ছোট। ছোট কাল থেকেই দুরন্তপনা প্রভাত টুডু অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য কথা বলেন। ক্লাশে ক্যাপ্টেনসীপও করেছেন। ছোটকাল থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত। এক সময় ভালো ফুটবল সংগঠকও ছিলেন। ‘এভেন’ নামে বিভিন্ন স্থানে ফুটবল টুর্ণামেন্ট আয়োজনের প্রধান কর্তাও ছিলেন। ২০০০ সালে মেট্রিক পাশ করার পর মারাত্মক রোড এক্সিডেন্টে তার ডান হাত ভেঙে যায় এবং মাথায় প্রচন্ড আঘাতে পড়াশুনা বন্ধ রাখতে হয়। সুস্থ হয়ে পরবর্তীতে এইচ.এস.সি. ও নটরডেম কলেজ থেকে ডিগ্রী এবং সরকারি বাংলা কলেজ হতে সমাজকর্মে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
কিন্তু প্রভাত টুডুর আইনজীবী হওয়ার প্রবল ইচ্ছে। কিন্তু কিভাবে আইনজীবী হতে হয়; কোথায়, কিভাবে, কি পড়লে আইনজীবী হওয়া যায় তা তার জানা নেই। তাই সে দুঃখ করে বলেন, আমি এমন কাউকে পাইনি যিনি আমাকে পরামর্শ দিবেন কিভাবে আইনজীবী হওয়া যায়। ‘আমি যখন নিজে নিজে জানলাম আইনজীবী হওয়ার পথ তখন ২০১২ সালে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই এবং ২০১৪ সালে এলএল.বি ও ২০১৬ সালে এলএল.এম সম্পন্ন করি’। এরপর ২০১৭ সালে আয়কর আইনজীবী হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনআরবি) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আয়কর আইনজীবী হিসেবে ঢাকা ট্যাক্সেস বারে সদস্য হন। এদিকে বার কাউন্সিলে পরীক্ষা জটের কারনে ২০১৮ সালে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন।
এরপর নিম্ন আদালতে ওকালতি করতে করতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্নার তত্ত্বাবধানে জুনিয়রসীপ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে প্রাকটিসের অনুমতি পরিক্ষায় অংশ নিয়ে ২০২৩ সালে প্রভাত টুডু হয়ে ওঠেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তিনিই বাংলাদেশের ইতিহাসে সুপ্রিম কোর্টে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মধ্য হতে প্রথম আইনজীবী। তিনি জানান, আমি নিপীড়িত, নির্যাতিত, অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। যারা গরীব অর্থের অভাবে আদালতে যেতে পারছেন না তাদের জন্য কাজ করতে চাই। ওকালতির পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন কাজে তিনি জড়িত রয়েছেন। তিনি ২০১২ খ্রি. উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন এবং বর্তমান পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তাঁর সকল শুভান্যুধায়ী ও পরিচিতজনদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।