করোনা পরিস্থিতির মাঝে জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়েছে লাগামহীন ভাবে। এ সময় মানুষ দলে দলে কর্মহীন হয়েছে, দারিদ্রতা গ্রাস করেছে তাদের। বিগত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে বেড়েছে জীবন যাত্রার ব্যয়। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার এ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য দিয়েছে। সংগঠনটি প্রতি বছরের শুরুতে জীবন যাত্রার ব্যয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু এবছর তারা প্রকাশ করলো বছর শুরু হওয়ার ছ’মাস পর। এ সময়ের মধ্যে নিত্য পণ্যের দাম আরো বেড়েছে। যা এ প্রতিবেদনে স্থান পায়নি।
ক্যাব বলছে, ২০২০ সালে রাজধানীতে জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। পণ্য ও সেবার দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। এর চেয়ে বেশি হারে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছিল ২০১৭ সালে ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, মোট ৩৪টি শ্রেণীতে পণ্য ও সেবার মধ্যে দাম কমেছে শুধু তরল দুধের। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল ও চিনির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি হারে বেড়েছে। বিভিন্ন ধরনের চালের দাম গড়ে প্রায় ২১ শতাংশ, ডালের দাম ১৪ শতাংশ, তেলের দাম ৯ শতাংশ এবং চিনি ও গুড়ের দাম প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
কাঁচাবাজারেও একই ভাবে বেড়েছে সবজির দাম। ২০২০ সালে সবজির দাম গড়ে ১০ শতাংশ, মাছের দাম ৭ শতাংশ, মুরগির দাম ১১ শতাংশ এবং গুরুর মাংসের দাম ৯ শতাংশ বেড়েছে। সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে পিঁয়াজ, রসুন ও আদা। আবার একই সময়ে গরম মসলার দাম বেড়েছে ৪ শতাংশ বলে মনে করে ক্যাব।
ঘাতক করোনার এ নির্মম সময়ে যে পানি ও বিদ্যুৎতের দাম বেড়েছে, তাও ক্যাবের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার এক হাজার লিটার পানির দাম প্রায় ২৫ শতাংশ আর বিদ্যুৎতের দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। মৌসুমের শুরুতে বোরো ধান ওঠার সময় চালের দাম কিছুটা কমলেও আবার তা ধীরে ধীরে বেড়েছে। আর করোনার মৌসুমে স্বাস্থ্য বিধি মেনে গণপরিবহনে চলার ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ বেশি দিতে হচ্ছে। যত কষ্টই হোক না কেন জীবন যাত্রা পরিচালনার জন্য জনগনকে টাকা খরচ করতে হচ্ছে নিজ পকেট থেকে। জনগনের কষ্টার্জিত অর্থ সরকার কোথায় বাঁচাবার জন্য সব ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করবে, সেখানে ব্যবসায়ীদের ইচ্ছের কাছে সরকার যেন আত্মসমর্পন করছে। করোনার কারনে বড় ব্যবসায়ীদের নানা প্রনোদনা দিয়ে কর্মচারী ও শ্রমিকদের চাকুরী না হারাবার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা দেখা যায়নি। শ্রমিক কর্মচারীরা চাকুরী হারিয়ে বেকারত্ব্যের শ্রোতে ভাসছে। এদেিক সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিৎ।
অথচ সরকার নির্বিকার। করোনার কারনে মানুষ এমনিতেই আতংকিত। তারপর যদি নিত্যপণ্যের দামের আগুনের উত্তাপে জীবন দূর্বিসহ হয়ে ওঠে তবে জনগন যাবে কোথায়? জনগন বাঁচলেই দেশ বাঁচবে। আর দেশ বাঁচলেই বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। তাই জনগনের চাহিদা বিবেচনায় সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।