সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৪:১৪ অপরাহ্ন

প্রস্তাবিত আনসার আইন নিয়ে পুলিশে ক্ষোভ, বাতিলের দাবি পুলিশের দুই অ্যাসোসিয়েশনের

  • প্রকাশ সময় বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৮৯ বার দেখা হয়েছে

এস.আর.ডেস্ক: অপরাধীকে আটক, দেহ তল্লাশি ও মালামাল জব্দের ক্ষমতা দিয়ে সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবিত আনসার ব্যাটালিয়ন আইন নিয়ে পুলিশ বাহিনীতে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের পুলিশের মধ্যে বেশি ক্ষোভ বিরাজ করছে। ২০০৮ সালেও একই চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে তখন পুলিশের তীব্র আপত্তিতে তা স্থগিত করা হয়। এবারও তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন।

পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ১৯৯৫ এর ধারা-৮(২) অনুযায়ী আনসার ব্যাটালিয়ন একটি সহায়ক বাহিনী। আটক, তল্লাশি, জব্দ ও জব্দ তালিকা প্রস্তুত করার বিষয়টি অপরাধ দমন ও উদঘাটনের ধারাবাহিক কার্যক্রম; যা ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশই ক্ষমতাপ্রাপ্ত। এক্ষেত্রে আনসার ব্যাটালিয়নকে ঐ সকল কার্যক্রমের কর্তৃত্ব প্রদান করা হলে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হবে। কোনো আইন প্রয়োগের জন্য একাধিক বাহিনীকে দায়িত্ব প্রদান করা হলে আইনটি প্রয়োগকালে পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি ও দায়বদ্ধতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে মতভেদসহ নানাবিধ সমস্যাসহ আন্তঃবাহিনী বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে।

প্রসঙ্গত, ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল-২০২৩’ সোমবার জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এতে আনসার ব্যাটালিয়নে বিদ্রোহ সংঘটন ও প্ররোচনাসহ অন্যান্য অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া দুটি (৭ ও ৮) ধারায় আনসার বাহিনীকে ফৌজদারি অপরাধ তদন্তের ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটি চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে বিল আকারে উত্থাপন ও পাস হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) সদর দপ্তর থেকে একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়। প্রস্তাবে আইন সংশোধন করে আনসার বাহিনীকে ফৌজদারি অপরাধ তদন্তের ক্ষমতা এবং পুলিশের মতো গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে পুলিশ বাহিনীর আপত্তির কারণে প্রস্তাবটি এত দিন আটকে ছিল। অবশেষে গতকাল তা সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।

পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, আনসার গঠন করা হয়েছিল সহায়তা করতে। নির্বাচন, আগামী ২৮ অক্টোবরের মতো উত্তেজনাপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ বড় বড় ঘটনায় সহায়তা দিয়ে আসছে আনসার বাহিনী। এই বাহিনীকে আইজিপির অধীনে দেওয়া যেতে পারে। যেমন বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রেষণে র‌্যাবে গেলেও, র‌্যাব কিন্তু আইজিপির অধীনে। পুলিশ হলো অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশকে সহায়তা করে র‌্যাব। একই ধরনের ক্ষমতা আনসারকে দেওয়া হলে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী বাহিনী পুলিশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

পুলিশের মাঠ পর্যায়ে যে চরম ক্ষোভ তা জানাতে পুলিশের আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি অতিরিক্ত আইজিপি (এসবি) মনিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক এসপি আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইন্সপেক্টর মাজহারুল ইসলামসহ ২৫ কর্মকর্তা রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। প্রস্তাবিত আইনে পুলিশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে বিবেচনার আশ্বাস দেন দুই মন্ত্রী। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, এই আইন পাস হলে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হবে। ঐ বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর কাছে পুলিশ কর্মকর্তারা প্রস্তাবিত আইনটির কয়েকটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানান। বিশেষ করে আনসারকে ফৌজদারি অপরাধ তদন্তের ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া সংক্রান্ত ধারা নিয়ে।

এ ব্যাপারে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, আনসার গঠন করা হয়েছিল সহায়তা করার জন্য। গ্রেপ্তারের ক্ষমতা আনসারকে দেওয়া হলে পুলিশের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেওয়াটা স্বাভাবিক। ২০০৮ সালেও এটা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে পুলিশের আপত্তিতে তা বাতিল হয়েছিল। আনসারকে পুলিশের মুখোমুখি করানো উচিত না। তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত পুলিশ মেনে নেবে। কিন্তু বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তাই ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।

সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, পুলিশের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অন্য একজনকে দেওয়া উচিত হবে না। এতে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেবে।

পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এসপি আসাদুজ্জামান বলেন, প্রস্তাবিত আনসার আইন নিয়ে পুলিশের মাঠ পর্যায়ে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইন্সপেক্টর মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত আনসার আইনটি সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের সাংঘর্ষিক। তাই এই আইন পাশ করা উচিত হবে না। এতে পুলিশের মতো একটি প্রতিষ্ঠিত বাহিনীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেবে। আমরাও চাই আনসার বাহিনীর উন্নত হোক। কিন্তু সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধির সাংঘর্ষিক কোন কিছু যেন না করা হয়।

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, আনসারের তিনটা বিভাগ রয়েছে। একটি ব্যাটালিয়ন, একটি সাধারণ ও একটি গ্রাম প্রতিরক্ষা। প্রস্তাবিত আইন শুধুমাত্র ব্যাটালিয়নের জন্য দেওয়া হয়েছে। আগেই উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে অস্ত্র ও ইউনিফর্ম দেওয়া হয়েছে। তাদের ক্ষমতা ভাগাভাগির জন্য নয়, একটি বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। র‌্যাব যেমন আটক করে পুলিশের কাছে দেয়, আনসারও আটক করে পুলিশের কাছে দেব। এটা ফৌজদারি আইনের সঙ্গে কোন ধরনের সাংঘর্ষিক বিষয় নয়। এটা নিয়ে কোন ধরনের ভুল বোঝাবুঝি হওয়ারও সুযোগ নেই বলে জানান সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আনসার বাহিনীকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা কখনোই দেওয়া হয়নি, হবেও না। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আসন্ন বিজয় দিবস উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি ।

আনসার বাহিনীকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা প্রসঙ্গে আইনের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আপনারা একটি ভুল ধারণা থেকে এই ধরনের প্রশ্ন করছেন। আনসার বাহিনীকে গ্রেপ্তারের অনুমতি কখনোই দেওয়া হয়নি। আজও দেওয়া হবে না, কোনো আইন দ্বারা দেওয়ার ক্ষমতাও আমাদের নেই। আমাদের ফৌজদারি আইনের কার্যবিধি রয়েছে, তার ভেতরে থেকেই সমস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ করতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনটি বর্তমানে স্থায়ী কমিটিতে রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। এখানে কোনো শব্দ যদি প্রশ্নের অবতারণা করে, তাহলে সেগুলো তারা সংশোধন করবেন। এখানে প্রচলিত আইনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে কোনো বাহিনীরই আমাদের প্রচলিত ফৌজদারি যে আইন রয়েছে সেটি মেনেই কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আরেকটি কথাই স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি, এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। শুনতে পাচ্ছি, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং মিডিয়াতে সংবাদ হচ্ছে, আনসার পুলিশের ক্ষমতা নিয়ে যাচ্ছে, এগুলো এক ধরনের প্রোপাগান্ডা। এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। দুটি বাহিনীই আমাদের জাতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। আইনশৃঙ্খলার মূল যে আইন, তার বাইরে কেউ নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin