নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাইমা আরাবী ইভার ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী এজাহারভূক্ত আসামীরা প্রতিনিয়ত হত্যাসহ নানা ধরনের হুমকী দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ইভার পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের দায়ের করা দুটি মামলার পিবিআই ও সিআইডির অভিযোগপত্রের সূত্রে জানা যায় ইভা একজন মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তিনি অনার্স ও মাস্টার্স এ প্রথম স্থান অধিকার করেন। ইভার সঙ্গে একই গ্রামের নাজমুল মাহমুদ পলাশ নামে একজনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। পলাশ মাদকাসক্ত হয়ে পরায় ইভা তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করে। এরপর ইভাকে পারিবারিকভাবে ২০২৩সালের ১৪ জানুয়ারী ভেটেরিনারি চিকিৎসক নাজমুল হাসান শাওনের সাথে বিয়ে দেন।
ইভার বিয়ের কথা শোনার পর পলাশ রেগে যায় এবং তার চাচা দামকুড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এজাহারভূক্ত ৩নং আসামী আমিনুল ইসলাম এর প্ররোচনায় পলাশ ইভাকে ২৪ঘন্টার মধ্যে স্বামীকে ছেড়ে তার নিকট চলে আসার জন্য বলেন। না আসলে আত্মহত্যা করবে এবং তার পরিবারকে জেলের ভাত খাওয়াবে। আসামী আক্তার হোসেন সহায়তায় বিয়ের পরের দিন ১৫ জানুয়ারী ২০২৩ইং তারিখ দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে কৌশলে ইভাকে ভালো ভাবে কোন কিছু বুঝতে না দিয়ে ডেকে আনেন আসামী আমিনুল ইসলাম, আকবর আলী ও ইমন। ইভা কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি অটোরিক্সা করে তাকে অপহরণ করে কাজী অফিসে নিয়ে যান তারা। পলাশ ইভাকে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথানের একজন কাজীকে দিয়ে জোর পূর্বক বিয়ে করেন। সেইসাথে পূর্বেও স্মামীকে তালাক দিতে বলেন বলে।
বিয়ের পরে ইভা কৌশল করে পলাশ এর নিকট হতে মুক্ত হয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসেন। সেদিনই বিয়ের বিভিন্ন ধরনের ছবি ও নিকাহ নামা প্রকৃত স্বামী শাওন এর নিকট হোয়াটস অ্যাপে প্রেরণ করলে শাওন ছবিগুলো বাড়ির সবাইকে দেখান। স্বামী থাকতে বিয়ের পরের দিন আরেকটি বিয়ে এবং বিভিন্ন ধরনের ছবি দেখে ইভার নিজের উপরে ঘৃনা জমে যায়। এ থেকেই ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখ বিকেলে অতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ইভা। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরেরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে জানান সেন্টু।
ইভার মামা সেন্টু ও ইভার মা তাসলীমা রশিদ বলেন, আসামিরা জামিনে থাকায় বেপরোয়া ভাবে তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন ও স্বাক্ষীদের উপর প্রভাব বিস্তার করছেন। আসামী আমিনুল ইসলাম কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় তার ভাতিজা পলাশ সহ আসামীদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন। তারা আরো বলেন, আমিনুল ইসলাম একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারী শিক্ষক হয়ে স্কুল ফাঁকি দিয়ে সরকারী দলের বিভিন্ন কর্মসূর্চীতে যোগদান করছেন এবং সিনিয়র ও শীর্ষস্থানীয় সরকার দলীয় নেতাদের সাথে ছবি তুলে ফেইস বুকে পোস্ট করছেন।
এবং ঐ ছবির দেখিয়ে স্বাক্ষিদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন এবং তার সাথে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ রয়েছেন বলে অপপ্রপাচর করনে। নেতারা পাশে থাকায় মামলায় তার কেউ কিছুই করতে পারবেনা বলে প্রচার করে বেড়াচ্ছে। শুধু তাইনয় আমিনুল ইসলাম মামলা তুলে নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের হুমকী এবং মামলরা না তুলে নিলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতি করবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন বলে জানান তারা।
এটা করেই আসামীরা ক্ষান্ত হচ্ছেন না। তারা অনেক সময় রাতের অন্ধকারে তাদের বাড়িতে ঢিল ছুড়ে এবং জানালায় এসে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। শুধু তাইনয় তিনি কোর্টের বিচারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার চেষ্টা করছেন তিনি। ফলে ইভার হত্যাকান্ডের ন্যয়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা শঙ্কিত উল্লেখ করে তারা আরো বলেন, একজন এজাহার ভূক্ত আসামী কি করে স্বপদে বহাল থেকে চাকরী করে যেতে পারেন। নির্দোষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে দ্রুত চাকরী থেকে সাময়িক বহিস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবী জানান তারা। তারা আরো বলেন আমিনুল তার আসামী হওয়ার বিষয়টি গোপন করে, শিক্ষক পরিচয়ে তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ অপপ্রচারে লিপ্ত আছেন।
এদিকে রাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, ‘সাইমা আরাবীর ওপর এতটা মানসিক চাপ তৈরি করা হয়েছিল যে, সে জীবনকে মূল্যহীন মনে করেছিল। এ ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য প্ররোচনাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পবা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। এ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদক রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলামের নিকট দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এর নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিনুল সম্পর্কে তিনিও অবগত আছেন। তিনি বাদি পক্ষকে তাঁর বরাবরে আমিনুল ইসলামের বর্তমান কর্মকাণ্ড তুলে ধওে একটি আবেদন দেয়ার জন্য বলেন। পূর্বের আবেদন পুণরায় তাঁর নিকট পাঠানোর জন্য পবা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বলেন। সেইসাথে সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলামের সম্পূর্ন তথ্য উপাত্ত এবং বর্তমান অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেন তিনি।
অভিযোগ সম্পর্কে আমিনুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা চলমান আছে। বাদী পক্ষ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তিনি একজন সরকারী চাকুরী জীবী। তিনি কারো বিপক্ষে এমন আচরণ করতে পারেন না। আর কাউকে ভয়ভীতি দেখাননি এবং কারো বাড়িতে হামলা করেন নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লেখ্য সাইমা আরাবী ইভা রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর কর্ণহার থানার দেবেরপাড়া গ্রামে।