এস.আর. ডেস্ক: রাজশাহীর পুঠিয়ায় শ্রমিক নেতা নুরুল হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মতিউর রহমান মতিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানির জন্যে ২০ জুন ঠিক করেছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্যারিস্টার আবু বকর সিদ্দিক রাজন।
জামিন স্থগিত চেয়ে নুরুল ইসলামের মেয়ে নিগার সুলতানার করা আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৫ জুন) আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের চেম্বারজজ আদালত এই আদেশ দেন। আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান খান। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার আবু বকর সিদ্দিক রাজন।
এর আগে মতিউর রহমান মতিনের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই জামিন স্থগিত চেয়ে নুরুল ইসলামের মেয়ে নিগার সুলতানার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবু বকর সিদ্দিক রাজন সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন। ওই আবেদন শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত এই আদেশ দেন।
২০১৯ সালের ১১ জুন সকালে পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার ‘এসএস ব্রিক ফিল্ড’ নামের একটি ইটভাটা থেকে শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় নুরুল ইসলামের মেয়ে নিগার সুলতানা থানায় এজাহার দাখিল করলেও পুলিশ তার এজাহার না নিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে রাখে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
থানার কোনো তৎপরতা না দেখে নুরুল ইসলামের স্ত্রী সাজেদা বেগম পুঠিয়া উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশী মামলা করেন। এই মামলার শুনানির সময় পুঠিয়া থানা নিগার সুলতানার সই করা একটি এজাহার আদালতে দাখিল করে, যাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি দেখানো হয়। তখনই নিগার সুলতানা ও তার মা সাজেদা বেগম আপত্তি জানিয়ে বলেন, এই এজাহার তাদের নয়।
পরে নুরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই আইজি, রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি ও রাজশাহীর এসপির কাছে ‘এজাহার বদলে ফেলার’ অভিযোগ দেয়া হয়। তারপরও পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন নিগার সুলতানা।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করার পাশাপাশি বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের নির্দেশে অভিযোগ তদন্ত করে পুঠিয়া থানার ওসি সাকিলসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিম মো. মেহেদী হাসান তালুকদার। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। সে রায়ে নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার তদন্তভার পিবিআইকে দেয়া হয়। পরে পুঠিয়ার সাবেক ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে তিনি আবারও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সর্বোচ্চ ভোট পান। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ফল পরিবর্তন করে আবদুর রহমান পটল নামে এক ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করে। এ নিয়ে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ করে নূরুল ইসলামসহ তিনজন বাদী হয়ে মামলা করেন। এরপর থেকে আবদুর রহমান পটল এবং তার সহযোগীরা নুরুল ইসলামকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
২০১৯ সালের ১০ জুন থেকে নুরুল ইসলাম নিখোঁজ হন। পরদিন সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সেদিনই তার মেয়ে নিগার সুলতানা আটজনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানার তৎকালীন ওসিকে একটি এজাহার দেন। সেই এজাহারে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনে পুঠিয়ার ওসির অবৈধ হস্তক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। এ কারণে ওসি সাকিল উদ্দীন আহমেদ এজাহারটি রেকর্ড না করে নিগার সুলতানাকে তা সংশোধন করতে বলেন। নিগার সুলতানা ওসির বিষয়টি বাদ দিয়ে পুনরায় থানায় এজাহার দাখিল করেন।
তখন এজাহারটি গ্রহণ করেন এবং কিছু সাদা কাগজে নিগার সুলতানার স্বাক্ষর নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। পরবর্তীতে নিগার সুলতানা পুঠিয়া থানা থেকে এজাহার ও মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর কপি সংগ্রহ করে দেখেন, প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামিদের নাম-ঠিকানা লেখার কলামে ‘অজ্ঞাতনামা’ লেখা আছে। আবার তার উল্লেখ করা আটজন আসামির পরিবর্তে সেখানে ছয়জনের নাম আছে।