সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

১২ হাজার টাকার খাসির চামড়া মাত্র ৫ টাকা!

  • প্রকাশ সময় বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই, ২০২১
  • ৫০৭ বার দেখা হয়েছে

এস আর ডেস্ক : সরকার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ধরছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা। আর খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৪ টাকা ধরা হয়েছে। কিন্তু গরুর চামড়া বিক্রি হলেও, খাসি বা বকরির চামড়া কিনছেন না ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় এবার পশুর চামড়া কোরবানিদাতার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বুধবার (২১ জুলাই) বিকালে নীলফামারী বড় বাজারে কথা হয়, নিউবাবুপাড়ার বিপ্লব মিয়া বলেন, বাজারে গরুর চামড়ার বেচাকেনা চললেও খাসি বা বকরির চামড়া নিতে চান না ব্যবসায়ীরা। ১২ হাজার টাকায় কেনা খাসির চামড়ার দাম বলছে ৫ টাকা। শুনেছি সরকারি দাম খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৪ টাকা। সেই অনুপাতে আমার চামড়া দাম হয় ২৪০ টাকা। কে দিবে এই টাকা?

সদরের কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের পাটকামড়ী গ্রামের কোরবানিদাতা মতিয়ার রহমান বলেন, সরকারের দেওয়া দাম মৌসুমি ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা দিচ্ছেন না। সরকারি দরের কথা জানতে চাইলে তারা দামেই বলে না। এবার কোরবানির পশুর দাম ভালো ছিল। কিন্তু সে অনুপাতে বাজারে চামড়ার দাম অনেকটাই কম। আমার দুটি ভালে মানের চামড়ার দাম চেয়েছি এক হাজার টাকা। মৌসুমি ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা চামড়া দুইটার দাম বলেছেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। বাধ্য হয়ে ৬০০ টাকায় দিয়ে বাড়ি আসি।

উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের চৌধুরি পাড়া গ্রামের চামড়া বিক্রেতা খোকন মিয়া (৪০) জানান, ৬৬ হাজার টাকায় গরু (প্রায় ৩০ ফুট) কিনে চামড়া বিক্রি করলাম ২০০ টাকায়। এবার গ্রামে চামড়ার মৌসুমি পাইকার চোখেই পড়েনি। অনেকেই এ অবস্থায় চামড়া মাদ্রাসা ও মসজিদে দান করে দিয়েছেন। গত বছরও চামড়ার টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন গরিব মানুষ, এবারও একই অবস্থা।

জেলা শহরের নিউ বাবুপাড়ায় পশু কোরবানি দিয়েছেন খতিবর রহমান খোকন (৫৫)। তিনি বলেন, ৭০ হাজার টাকায় গরু কিনে চামড়ার দাম পেলাম ৩০০ টাকা। বলতে গেলে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে পশুর চামড়া।

এদিকে, জেলা শহরের চামড়া ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম (৫০) বলেন, গত তিন বছর থেকে চামড়া শিল্পে ধস নেমেছে। পাশাপাশি এতিম অসহায়রাও বঞ্চিত হয়েছেন কোরবানির চামড়ার হক থেকে। গত বছর দুইশ’ চামড়া কিনে পথে বসেছিলাম। পরে ঢাকার এক মহাজনের কাছে পানির দামে বিক্রি করেছি। লাভতো দূরের কথা, লবণ ও পরিশ্রমের টাকাই উঠে নাই।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্চের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী শফিকুল আলম ডাবলু মোবাইলফোনে জানান, মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ এই ব্যবসায় মোট তিনবার চামড়া হাতবদল হয়। প্রথমে মৌসুমি ব্যবসায়ী গ্রাম ঘুরে পশুর চামড়া সংগ্রহ করেন। দ্বিতীয় ধাপে পাইকার বা মধ্যস্থতাকারী নগদ টাকায় ওই চামড়া কিনে নেন। তৃতীয় ধাপে আড়ৎদার সেগুলো ট্যানারির মালিকের কাছে বিক্রি করেন। এ কারণে কোরবানিদাতারা সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

তিনি আরও বলেন, তিনবার হাত বদলের পর আড়ৎদার কিংবা ট্যানারির মালিকরা তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্ত হন না। কিন্তু গ্রামের পাড়া মহল্লা ঘুরে চামড়া কিনে লোকসানে পড়েন মৌসুমি ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ট্যানারির মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছেন তারা। সরকার নির্ধারিত বর্গফুট অনুযায়ী চামড়ার মূল্য পরিশোধের জন্য ট্যানারি মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin