সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৪:১৫ অপরাহ্ন

শাহিদ মোটা বলায় শরীরের যত্ন নেন না বিদ্যা বালান

  • প্রকাশ সময় শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২২
  • ৪৪৯ বার দেখা হয়েছে

বিনোদন ডেস্ক : বলিউডে তিনি রাজত্ব করবেন, ধারণাই করেননি কেউ। বিদ্যা বালনও করেননি। অথচ তিনিই ‘পরিণীতা’, ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ ‘ভুলভুলাইয়া’, ‘কহানি’, ‘হামারি অধুরি কহানি’, ‘শকুন্তলা দেবী’র নজরকাড়া সাফল্যে বহু নায়িকার ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন। কোন সোনার কাঠির ছোঁয়ায় সাদামাঠা মেয়েটি বাংলা থেকে বলিউডে ছেয়ে গিয়েছেন?

ক্যালেন্ডার বলছে ৪০ পেরিয়ে গিয়েছেন বিদ্যা বালন। কিন্তু ছবির সংখ্যা কিন্তু কমেনি। ‘চেনাব গাঁধী’, ‘চাঁদ ভাই’, ‘জলসা’ এবং একটি নাম না হওয়া ছবি তার হাতে। অর্থাৎ, ২০২২ সালও তার দখলে!

অথচ অভিনেত্রী কোনো দিন ভাবতে পারেননি, তারও এ রকম মুঠো ভর্তি কাজ থাকবে। অবশ্যই মেধাবী রূপসী তিনি। কিন্তু গ্ল্যামারাস তো নন। তার উপরে তার প্রথম ধারাবাহিক মুক্তি পায়নি। প্রেক্ষাগৃহের মুখ দেখতে পায়নি তার প্রথম ছবিও। ফলে, প্রযোজক, পরিচালকের চোখে তিনি অপয়া। এমন অভিনেত্রীকে কে ছবি দেয়?

বিদ্যা বালান

বিদ্যা বালান

ব্যস, এরপরেই দক্ষিণী ছবির দুনিয়া দরজা তার জন্য বন্ধ। পরপর ২৫টি ছবি থেকে আক্ষরিক অর্থেই ঘাড়ধাক্কা খেয়েছিলেন তিনি। রাতের পর রাত ঘুমোতে পারেননি বিদ্যা। এক সময় হতাশ হয়ে ফিরে এসেছেন বলিউডে। নাক-কান মুলে প্রতিজ্ঞা করেছেন, আর কোনো দিন দক্ষিণী ছবিতে মুখ দেখাবেন না। যদিও পরে সেই প্রতিজ্ঞা ভেঙেছিলেন নিজেই। মালায়লী ছবি ‘উরুমি’তে অতিথি শিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করে।

বলিউডে ফিরে ফের বিজ্ঞাপনী ছবিতে বিদ্যা। এই সময় তিনি প্রদীপ সরকারের বেশ কিছু বিজ্ঞাপনী ছবিতে অভিনয় করেন। ক্যামেরার চোখ দিয়ে দেখতে দেখতে নায়িকার চোখেমুখে বাঙালি পেলবতা খুঁজে পেয়েছিলেন প্রদীপ। তিনিও বাঙালি। স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যাকে ঘিরে মুগ্ধতা তৈরি হয়েছিল তার মনে। তার আঁচ পেয়েছিল বলিউড। পত্র-পত্রিকার পাতায় পাতায় কেচ্ছার বন্যা তাই নিয়ে। সবার অলক্ষ্যে নায়িকা সেই প্রদীপের আলোতেই বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আলোকিত!

প্রদীপ সরকারের দুটো মিউজিক ভিডিওর মুখ ছিলেন বিদ্যা। একটির গায়ক পলাশ সেন। অন্যটি, শুভা মুদগল। ভিডিও দু’টি সেই সময়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। একটু একটু করে অন্য পরিচালকদের চোখেও রং ছড়াচ্ছিল নায়িকার অভিনয়। তারপরেও ভয়ে কেউ ডাকতে পারছিলেন না তাকে। কারণ, দক্ষিণী দুনিয়ায় তার ২৫টি ছবি হাতছাড়া হওয়ার ঘটনা যে সবার জানা।

সেই সময় বাঙালিনী বিদ্যাকে ছবিতে নেওয়ার সাহস দেখালেন গৌতম হালদার। তার আর্ট ফিল্ম ‘ভাল থেকো’র নায়িকা হলেন তিনি। বদলে গৌতমের একটাই শর্ত, নিখুঁত বাংলা বলতে হবে। কথা রেখেছিলেন বিদ্যা। শুধুই চেহারায় নয়, চলনে বলনে হয়েছিলেন নিখাদ বাঙালিনী। ছবি যথা সময়ে মুক্তি পেল। বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানোও হল। বিদ্যা তুমুল প্রশংসিত। বেশ কিছু পুরস্কারও পেল ছবিটি। বিদ্যা পেলেন আনন্দ পুরস্কার। ‘ভাল থেকো’ সেরা সিনেমাটোগ্রাফি বিভাগে জাতীয় পুরস্কারের সম্মান পেতেই কেল্লাফতে! এবার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে লাগল অভিনেত্রীর।

বিদ্যা বালান

বিদ্যা বালান

বিদ্যাকে এবার মর্যাদা দিয়ে ডেকে নিলেন বিধু বিনোদ চোপড়া। তার ‘পরিণীতা’ ছবির জন্য। তার বাঙালি সৌন্দর্যই তাকে সঞ্জয় দত্ত, সাইফ আলি খানের বিপরীতে নায়িকা বানিয়ে দিল। অভিনেত্রীর ভাগ্য দেখে ঈর্ষায় জ্বলতে শুরু করলেন অনেকেই। বিদ্যা কিন্তু আবেগে ভাসেননি। তার অতীত তাকে মাটিতে পা রেখে হাঁটতে সাহায্য করেছে।

‘পরিণীতা’ বিদ্যা প্রেক্ষাগৃহে এলেন, দেখলেন আর দর্শকমন জিতে নিলেন। কিন্তু তার স্থায়ীত্বও মাত্র এক বছর! ফের তাকে নিয়ে নতুন শোর। সাজ, রূপসজ্জা নিয়ে মোটেই সজাগ নন তিনি। তার উপরে বেঢপ! সেই সময় পোশাক শিল্পী সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বিদ্যার দিকে। নতুন নতুন ভাবে তিনি সাজিয়ে তুলেছিলেন অভিনেত্রীকে। আর বিদ্যা নিজে জবাব দিয়েছিলেন নিজের মতো করে। ‘দ্য ডার্টি পিকচার’-এর জনপ্রিয়তা চাবুক মেরেছিল নিন্দকদের মুখে। সাহসী বিদ্যাকে দেখে থমকে গিয়েছিল মায়ানগরী।

বিদ্যা তখন যা ছুঁচ্ছেন, তা-ই সোনা! ‘ভুলভুলাইয়া’, ‘লাগে রহো মু্ন্নাভাই’, ‘গুরু’, ‘পা’, ‘ইশকিয়া’, ‘হে বেবি’, ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’ তার উদাহরণ। ‘পা’ ছবিতে অভিনয়ের পরে মুক্তকণ্ঠে বিদ্যার প্রতিভার প্রশংসা করেছিলেন স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন।

সাল ২০১২। ফের মোড় ঘোরানো বছর বিদ্যার জীবনে। সুজয় ঘোষের ‘কাহানি’ এল প্রেক্ষাগৃহে। দূর্গাপূজার আবহে শহর কলকাতায় ‘বিদ্যা বাগচী’। সারা ছবি ডি-গ্ল্যাম লুকে বলিউডের বিদ্যা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অন্তঃসত্ত্বা তিনি। দর্শক দেখলেন, একা এক নায়িকা নিজের কাঁধে টেনে নিয়ে গেলেন গোটা একটি ছবি। এই ছবির সিক্যুয়েলেও ছিলেন তিনি। বিদ্যার পাশাপাশি এই ছবির হাত ধরেই নজির সৃষ্টি করেছে সবচেয়ে ছোট চরিত্র ‘বব বিশ্বাস’। যাকে নিয়ে সম্প্রতি একটি পূর্ণ দৈর্ঘের ছবি তৈরি করেছেন সুজয়-কন্যা অন্নপূর্ণা ঘোষ।

বহু অসম্মানের পরে বিদ্যার ঝুলিতে হাজারো সম্মান। একটি জাতীয় পুরস্কার, আনন্দ সম্মান সহ অজস্র সম্মান তিনি পেয়েছেন। এরপরে তিনি অভিনয় করেছেন ‘ঘনচক্কর’, ‘হামারি অধুরি কহানি’, ‘বেগম জান’, ‘তুমহারি সুল্লু’, ‘মিশন মঙ্গল’, ‘শকুন্তলা দেবী’তে।

বিদ্যা বালান

বিদ্যা বালান

২০১২ আরো একটি কারণে স্মরণীয় বিদ্যার কাছে। ওই বছরই তিনি বিয়ে করেন প্রযোজক সিদ্ধার্থ রায় কাপুরকে। সিদ্ধার্থের এটি দ্বিতীয় বিয়ে। সবার শঙ্কা ছিল, আদৌ এই বিয়ে টিকবে তো! বিদ্যা কোনো দিন সামান্য বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাননি। বদলে মন দিয়ে সংসার করছেন। পাশাপাশি, উপভোগ করছেন অভিনয়।

এত সম্মান, যশ, অর্থ, খ্যাতি, প্রতিপত্তি কি বিদ্যার অতীত অপমান ভোলাতে পেরেছে? উত্তর বিদ্যার কাছে। তবে একটি ক্ষত বোধহয় আজীবন থেকে যাবে তার মনে। ‘দ্য ডার্টি পিকচার’-এ অভিনয় করার সময় শাহিদ কাপুর তার শরীর নিয়ে প্রকাশ্যে ব্যঙ্গ করেছিলেন। বিদ্যার ভারী শরীরের জন্য তাদের প্রেমও টেকেনি! এক মাত্র এই আঘাতেই নাকি নায়িকা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিলেন। সেই অভিমানেই কি নিজের শরীরের প্রতি আর কোনো দিনই বাড়তি যত্ন নেননি?

উত্তর এখনো জানা নেই মায়ানগরীর বাসিন্দাদের।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2021 dailysuprovatrajshahi.com
Developed by: MUN IT-01737779710
Tuhin